নারীদিবস কি তাহলে শো-অফ??

ইংল্যান্ডে নারীদের অবস্থান শক্ত হ্‌ওয়াতে খুব একটা বেশী নির্যাতনের শিকার হয় না কেউ। তারপরও ইংল্যান্ডে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস পালন করা হয় নারীদের অধিকার, সমমর্যাদা ও অবস্থান আরো প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। সকালে ঘুমটি প্রায় ভেঙ্গে গেল একটি ফোনকলের মাধ্যমে। ফোনটি ধরার সাথে সাথে অপর সাইডে যিনি আছেন তাকে আমি বললাম যে, হ্যাপি উইম্যানস ডে। বলতে গেলে আধা আধা ঘুম তখনই চলে গেল, যখনই তার উত্তর পেলাম খুব তিব্রতার সাথে। ভাবির উত্তরে যতটুকু বুঝলাম যে, এই নারী দিবস পালন করাটা আমাদের উচিত না কারন এই পৃথিবীতে সংসার নাকি পুরুষদের জন্য টিকে থাকে ভাবির ভাষ্যমতে। টাকা টাই জীবনে সব এবং এই টাকাটি উর্পাজন করে আনে পুরুষরা সংসারের জন্য। সেখানে অত্যাচার করুক আর নাই করুক কোনো কিছুরই প্রতিবাদ করা উচিত না। খুব অবাক হয়ে আমি তার কথাগুলো শুনতে ছিলাম ঐ মুহূর্তে।

দ্বিতীয় কথাটি হচ্ছে ভাবির মতে যে, কোনো মুসলিম নারীদের এই ধরনের দিবস পালন করা উচিত না কারণ নারীরা এমনভাবে চলাচল করবে যাতে অন্য পুরুষরা দেখতে না পায়। শুধু তাই নয়, তিনি আরো বললেন যে, পুরুষরা তো দাবি করে না যে তাদের জন্য পুরুষ দিবস বের করার। তাহলে আমরা নারীরা প্রতিক্ষনে প্রতিক্ষনে নারী দিবস নারী দিবস করে কেন চিল্লাতে থাকি। শিপু তোমার কি মনে হয় না এই নারী দিবস পালন করাটা সুশীল সমাজের জন্য শো অফ। আমি তার কথার প্রক্ষিতে বললাম পুরুষরা নারীদের মতো অত্যাচারিত হয় না শারিরীক ও মানসিকভাবে, তাহলে তারা(পুরুষ)কিভাবে এই দিবস দাবি করে? এই দিবস পালনের মাধ্যমে আমরা নারীদের অধিকার ও অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হতে পারি।

ঐ সময়ে বুঝলাম যে, তাকে(ভাবি) আসলে বয়ান দিয়ে কোনো লাভ হবে না আমার, কারণ তিনি অন্য জগতে বাস করছেন। আমার মনে হয় তিনি আসলে সত্য কথাটিই বলেছেন কারণ তার জগতের মানুষ মাত্র ৩ জন এবং ধর্মকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন, যেখানে শুধু তারা ৩ জন এবং ধর্ম। এখানে ইংল্যান্ডে অনেক বাঙ্গালী পরিবার আছে, যারা তাদের স্বামীদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়েও কোনো প্রতিবাদ করে না। কারণ তাদের মতে তিন বেলা খাদ্য এবং এই দেশে স্যাটেল হওয়া টাই তাদের জন্য অনেক বড় আর্শীবাদ।

ভাবির এই ফোনালাপের পরে এক পরিবাবের কথা মনে পড়ে গেল আজকে, যে পরিবারটির সাথে আমরা ভাড়াটে হিসেবে ছিলাম প্রায় ৯ মাস। ভালোই দিন কাটছিল কিন্তু একদিন হঠাৎ করে রাত ৩টায় ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল প্রচন্ড কান্নার আওয়াজে। আমি এবং আমার বোন তখন পর্যন্ত বুঝতে পারি নি যে, এই কান্নাটির আওয়াজ কোথা হতে আসছে? যাই হোক পরে বুঝলাম যে আমাদের বাসা থেকে। আমাদের বাড়িওয়ালা বাড়িওয়ালী কে প্রচন্ড ভাবে মারছেন এজন্য যে, কেন পুরুষটিকে টাকা দেওয়া হলো না ধুমপান করার জন্য। হায় রে খোদা!! কই যাবো? এমনে লোকটি সারাদিন বাসায় পরে থাকে, কোন উর্পাজন করে না তারমধ্যে আবার বড় বড় কথা। মাঝে মধ্যে বুঝে উঠতে আসলে কোন দেশে আসছি ইংল্যান্ডে নাকি এখনো বাংলাদেশেই আছি।

তারপর পরের দিন আমার ছোট বোন যখন তাকে বললো যে, আপনাকে যদি আবার এই ধরনের অত্যাচার করে তাহলে আমরা কিন্তু পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো এ কারনে যে যদি উনি আপনাকে মেরে ফেলে? আর তাছাড়া আপানাদের সন্তানরা কি শিখবে এসব দেখে। খুবই মর্মাহত হলাম আপাটির কথা শুনে। তিনি বললেন যে, দেখো সংসারটা টিকিয়ে রাখছি শুধুমাত্র সন্তানদের কথা চিন্তা করে, তা না হলে ওরা ধংস হয়ে যাবে। এর থেকে বরং অত্যাচার সহ্য করে যাওয়াই ভালো। খুব অবাক হলাম এই ভেবে যে, এই নারীটি পরিবারের কথা চিন্তা করে সব সহ্য করে যাচ্ছে, আর পুরুষটি সেই সুযোগটিকে ব্যবহার করছে। ওয়াও!! কবি এইখানেই নিরব হয়ে রইলো।

হায়রে দুনিয়া!! এই রকম অনেক বাঙ্গালী পরিবার আছে যারা মুখ বুজে সমস্ত অত্যাচার সহ্য করছে পরিবারের কথা চিন্তা করছে। তবে এটি ঠিক এই ধরনের নারীদের জন্য নারী দিবস সম্পূর্নভাবে মূল্যহীন। কারণ তারা ভালো করে জানে যে প্রতিবাদ করলে সন্তানদের মানুষ করা যাবে না। বাংলাদেশ পেরিয়ে আজকে উন্নত দেশে বসবাস করছি ঠিকিই, কিন্তু আমরা আমাদের বিবেক ও মনমানসিকতা এখনো পরিবর্তন করতে পারি নি। যার কারণে আমাদের নারীরা শুধু যে দেশে অত্যাচারিত তা নয়, এমনকি বিদেশেও এসে অত্যাচারিত। শুধু শিক্ষিত হলেই হয় না, দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হওয়া উচিত।

Leave a comment